গল্প- বউমা (full)
বউমা
--এই ডালিম দরজা খোল। (মা)
---(আমি চুপ)
---কি হল, দরজা খোল, মেয়েটা ঘুমাবে না????
---অন্য রুমে ঘুমাতে বল।
---অন্য রুমে মানে, এই রুমেই তো ঘুমাবে।
---তোমার বউমা, তোমার সাথেই ঘুমাক। আমি পারব না।
---দরজা খুলবি নাকী তোর বাবাকে ডাকব????
মা ও হয়ছে এক, কিছু হয়লেই বাবাকে ডাকবে। আরে
বাবা কথায় কথায় বাবাকে ডাকার কী আছে???? খুলছি
তো....
বাবাকে খুব ভয় পাই, সেইরকম রাগি ও গম্ভির প্রকৃতির
মানুষ।
---এবার হয়ছে??? (দরজা খুলে)
---আয় মা ভেতরে আয়, বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে
লিজাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল।
---মা ওকে অন্য রুমে ঘুমাতে দিলে কী হত??? কচি খুকি
তো না যে ভয় পাবে।
---তোর সমস্য কী??? তুইও তো কচি খোকা না যে
একসাথে থাকতে পারবি না। আর তোর বউ অন্য রুমে
কেন ঘুমাবে????
---আমার তো সারা বিছানা লাগে ঘুমাতে, তুমি জানো
তো, আর কোলবালিশ জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না।
---সেটা তো জানিই, এখন থেকে দুজন ভাগ করে
ঘুমাবি। আর কোল কোলবালিশ জড়িয়ে ধরেই ঘুমাবি....
বলেই মা মিটি মিটি হাসতে হাসতে চলে গেলো....
আমিও দরজা আটকে বিছানাই বসলাম, ভাবছি যা
রাগি এই মেয়ে যদি কোলবালিশ ভেবে একবার
জড়িয়ে ধরি তবেই হয়ছে। আমি শিউর তুলকালাম কান্ড
বাধিয়ে দিবে।
একবার একটু সামনা সামনি পড়েগিয়েছিলাম, একটুর
জন্য ধাক্কা খায়নি। তাতেই যা দিয়েছিল এখনো মনে
হলে ভয় হয়।
আর এখন তো.....
আমি ডালিম আহমেদ , বাবা মায়ের আদরের সন্তান।
ছোট্ট একটা কম্পানিতে মোটামুটি বড় পদের একটা
চাকরি করি। বাবা মায়ের সাথেই থাকি।
আর যাকে নিয়ে এত আলোচনা সে হল সুমাইয়া
সুলতানা লিজা , ছোট্ট করে সবাই লিজা বলেই ডাকে।
পাশের ফ্লাটেই ওরা থাকে বাবা মা একটা ঝোচ্ট
ভাই সহ। আর ও এখন আমার বউ, খুব রাগী একটা মেয়ে,
আর হঠাৎ করে বিয়েটা হওয়াতে আমিও একটু অপ্রস্তুত
।
খুলেই বলি, আজ লিজার বিয়ের কথা ছিল, অন্য একটা
ছেলের সাথে। অনেক আগে থেকেই সব ঠিক ছিল। আজ
সব আয়োজন ও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মহুর্তে এসে
বিয়েটা আর হয়নি।
ওর হবু বরটা তাঁর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ভাগছে। আর
আমার কপাল পুরছে। আরে ভাই তুই ভাগবিই যখন তবে
আগেই ভেগে যেতিস, শুধু শুধু একটা মেয়ের জীবন নষ্ট
করার অধিকার কই পাইলি।
আমাদের সমাজে যদি কোন মেয়ের বিবাহ ভেঙে যায়
তবে সব দোষ মেয়েটার। যদিও সেখানে তার কোন
ভুমিকাই ছিল না।
তো আমারাও উপস্থিত ছিলাম বিয়েতে, পাশা পাশি
থাকি সে সুত্রেই দাওয়াত ছিল.... যখন হঠাৎ বিয়ে
বাড়িতে হইচই শুরু হবার পর, সবকিছু জানার পরে বাবা
এসে বলল
---ডালিম...
---জি বাবা...
---আমি চাই এই বিয়েটা তুমি করবে, আর লিজাকে
আমাদের ও খুব পছন্দ ।
জীবনে বাপের মুখের উপর কথা বলতে পারিনি আর
আজ, অসম্ভব। তখন আমারো মনে হয়ছিল পালিয়ে যায়।
কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে সৎ সাহস টা
করে উঠতে পারি নি।
এর পরই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। বউ নিয়ে বাড়ি
ফিরলাম, সবাই বিয়ে খাইতে গিয়ে ভরপেট খেয়ে
বাড়ি ফেরে, আমি সাথে বউ নিয়েই ফিরলাম।
সৌভাগ্য না দুরভাগ্য জানিনা....
মেয়েটা সেইরকম রাগি, তাই চাইছিলাম ও কিছুদিন
আলাদা থাকুক, তারপর না হয়।
তাই আগে এসেই দরজা বন্ধ করে ঘুম দিয়েছিলাম,
কিন্তু মায়ের জন্য তা আর হল কই.....
এখন পর্যন্ত লিজার সাথে আমার একটা কথাও হয়নি।
---ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাও। (আমি)
---হুম বলেই চলে গেলো ওয়াস রুমে। (লিজা)
আমিও আবার বিছানায় গা ছড়িয়ে দিলাম।
অনু ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশেই শুয়ে পরল।
অন্য দিকে আমিও কোলবালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,
মন চাইছে কোলবালিশ ফেলে দিয়ে বউটাকে জড়িয়ে
ধরি, কিন্তু যদি রাগ করে, যাচ্ছেতাই ব্যাপার হবে
তাহলে.....
তাই মনের আশা কোলবালিশ দিয়েই মিটালাম......
ভোরে লিজার ডাকেই ঘুম ভাঙল, চোখ খুলে দেখি
মেয়েটা গোসল করে খোলা চুলের পানি ঝারছে আর
ডাকছে, ওর দিকে তাকাতেই চোখটা আটকে গেলো, ও
যে এত সুন্দর আগে বুঝিনি, মনের অজানতেই মুখ থেকে
বেড়িয়ে গেলো "মাসআল্লাহ"
বাঙালী নাড়ীকে শাড়ীতে আসলেই সুন্দর লাগে। আজ
লিজাকে না দেখলে হয়ত বুঝতেই পারতাম না।
আর বুঝবই কী করে, যখন দেখি সবসময় হিজাব পড়ে
থাকে।
কখনো মুখটাও দেখতে পাই নি.....
---কী হল কী দেখছেন অমন করে?????
লিজার কথায় ঘোর কাটল
---না কিছু না....
---ওও, এখন উঠুন, অনেক ঘুমায়ছেন, গোসল করে ফ্রেশ
হয়ে নামাজে যান।
---না, পড়ে উঠব।
---কী বললেন???? রাগী লুক নিয়ে
---না না যাচ্ছি.... যে রাগী মেয়ে না যানি কী করে
বসে আবার।
এই জন্যই শীতের দিনে বিয়ে করা উচিৎ না, তাহলে এই
ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।
---অনেক কষ্টে গোসল করে বের হলাম।
দেখি লিজা পান্জাবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
বের হতেই হাতে দিল, পান্জাবি পা জামা পড়ে
মসজিদে রওনা দিলাম, লিজা দরজা পর্যন্ত আসল।
বাইরে বের হতেই আরো শীত লাগতে লাগল, লিজা
ডাকদিয়ে দাড়াতে বলল, ভেতর থেকে চাদর এনে দিল।
চাদর গায়ে দিয়ে মসজিদের দিকে যাচ্চি আর ভাবছি,
রাগী মেয়েটা আজ এমন মিষ্টি আচরন করছে কেন?????
বিয়ের পরে সব মেয়েদের মাঝেই কী এই পরিবর্তন
আসে????
হয়ত আসে, কারন বিয়ের পরে নতুন পরিবেশ, নতুন
দায়িক্ত, নতুন করে যোগ হওয়া কর্তব্য। সব মিলিয়ে
বিশাল ব্যাপার......
মসজিদে গিয়ে নামাজ পরে বাড়িতে রওনা দিলাম,
বাড়ি এসে দেখি লিজা মায়ের সাথে রান্নাঘরে কী
সব খুটুর মুটুর করছে, রুমে এসে আবার শুয়ে পড়লাম।
কিছুখন পরেই লিজা এসে নাশতা করতে ঢেকে গেলো,
আমি চেয়ার টেনে বসলাম, লিজাকেও মা আমার
পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।
নাশতা করে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি....
---কোথাও বের হচ্ছেন????
---অফিস যাব তো।
---ওওও আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,
---আচ্ছা ঘরের মাঝে তোমার এই হিজাব না পড়লে
হয়না???
---না হয় না, আপনার সামনে খুলে রাখতে পারি, কিন্তু
হঠাৎ যদি বাইরের কেও আসে????
---আচ্ছা থাক তোমার মন যে ভাবে চাই। আমি আসছি...
চলুন বলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো.....
---পৌছে ফোন দিয়েন।
---তোমার নাম্বার তো নেই।
---মায়ের কাছে দিয়েন।
---আচ্ছা.....
বলেই চলে এলাম....
অফিসে পৌছে মাকে ফোন করলাম, প্রতিদিনেরই
রুটিন এইটা।
দুপুর হয়ে এলো, ক্যান্টিনে যেতে হবে খেতে,
ডেস্কথেকে উঠতে যাব এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল,
একটা অপরিচিত নাম্বার।
---আসসালামুআলাই
---ওয়ালাইকুম আসসালাম.....
---কে বলছিলেন??
---আমি লিজা....
---ও তুমি, কিছু বলবা????
---খাইছেন দুপুরে????
---না ক্যান্টিনে যাব খেতে।
---আগে অযু করে নামজ পরে নেন, তারপর খাবেন
ক্যামুন?????
---আচ্ছা, তুমি খাইছ????
---না আপনি খাওয়ার পরে ফোন দিবেন, তারপর খাব।
---না তোমার নামাজ পড়া হলে খেয়ে নাও।
---আগে আপনি খেয়ে আসুন।
---আরে আমি অনুমতি দিচ্ছি তো, যাও।
---খেয়ে এসে ফোন দিয়েন, রাখছি....
---আচ্চা রাখ....
নামাজ পড়ে, ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নিলাম, তারপর
লিজাকে ফোন দিলাম।
---আসসালামুআলাই
---ওয়ালাইকুমআসস
---নামাজ পড়ছেন?????
---হুম, নামাজ পড়ে খেয়ে এসে তোমাকে ফোন
দিলাম......
তুমি খাইছ????
----না এখন খাব....
---তোমারে না বললাম খেয়ে নাও।
---আপনার আগে খাই কী করে????
---আচ্ছা যাও, খেয়ে নাও.... রাখছি....
---আচ্ছা....
সন্ধার দিকে বাড়ি ফিরলাম, আজ ঘরটা বেশ
গোছালো দেখছি, নিশ্চয় লিজা গুছিয়েছে।
বলতেই হয় মেয়েটার গুন আছে.....
সব ঠিক আছে, আমার কোল কোলবালিশ কই????
কোথাও দেখছি না।
হয়ত আছে কোথাও.... ঘর গোছানোর সময় রাখছে
কোথাও....
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম।
এশার আযান শুরু হতেই লিজা এসে নামাজের জন্য
তাগাদা দিল, আমিও রেডি হয়ে মসজিদে রওনা হলাম।
বাইরে বেড়িয়ে হাটছি আর ভাবছি, যে আমি কোন দিন
ঠিক মতন নামাজ পড়িনি, সেই আমি আমার আজ এক
ওয়াক্তও মিস হয়নি। একমাত্র লিজার জন্য। রাগী
হলেও মেয়েটার মনটা খুব ভাল বলেই মনে হচ্ছে, এই দুই
নিনে তো তাই মনে হচ্ছে....
মসজিদ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই লিজা খাইতে
ডাকল, গিয়ে খেয়ে নিলাম।
ঘুমাতে এসেও দেখি আমার কোল কোলবালিশ নেই।
---লিজা এই লিজা, এদিকে ওসো তো।
---কী হল???? কিছু লাগবে।
----কোলবালিশ কই????
রাগি একটা লুক নিয়ে কিছুখন দাঁড়িয়ে রইল, তারপর
কিছু না বলেই চলে গেলো।
আমি নিরুপায় হয়ে শুয়ে পড়লাম,
হাতের কাজ শেষ করে এসে লিজার পাশে শুয়ে পড়ল।
আমি ঘুমাতে না পেরে ছট ফট করছি। বুঝতে পেরে
লিজা বলল
---কী ঘুম হচ্ছে না???
---না।
---কোলবালিশ লাগবেই?????
---হুম, অভ্যাস হয়ে গেছে তো। ছাড়তে পারব না তো এত
সহজে.....
---পাশে জীবন্ত একটা কোলবালিশ থাকতে, পুরোনো
অভ্যাস ছাড়তে বলছে কে?????
কী বলল লিজা???? সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো,
জীবন্ত কোলবালিশ বলতে কাকে বোঝাল???
নিজেকে????
তাহলে কী ওকেই জড়িয়ে ধরতে বলছে????
লিজা কিছুটা আমার দিকে সরে আসল, এবার আমি ওর
ইঙ্গিত পরিস্কার বুঝতে পারলাম, তাই দেরি না করে
জড়িয়ে নিলাম বুকের মাঝে।
ও বিড়াল ছানার মতন মিশে যেতে চাইল বুকের মাঝে।
পরের দিন ঘুমাতে এসে দেখি বালিশ একটা, আজ
আবার পাগলিটার কী মতলব????
---আরেকটা বালিশ কই???
---আরেকটা কী হবে, এটাতে আপনি মাথা দিবেন।
---আর তুমি,
---আগে আপনি শুয়ে পরেন তারপর দেখাচ্ছি.....
আমি শুয়ে পড়তেই আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে
পড়ল।
---আচ্ছা তুমি না আগে আমাকে দেখলেই কেমন রাগী
ভাব দেখাতে।
---তখন তো আপনি পর পুরুষ ছিলেন তাই, যাতে আপনি
আমার প্রতি দুর্বল না হন, আর আমি। কারন ইসলামে
এসব কিছু হারাম।
----হুম বুঝলাম, কিন্তু তোমার তো অন্য কারে সাথে
বিয়ে হবার কথাছিল।
---ছিল, ভাগ্য যেখানে লেখা ছিল সেখানেই হয়ছে...
---এত সহজে মেনে নিলে কী ভাবে????
---যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে সে সব কিছু খুব
সহজে মেনে নিতে পারে। আপনিও তো আমাকে মেনে
নিয়েছেন।
---তোমার সঙ্গ যে পাবে শেই সব কিছুই খুব সহজেই মনে
নিবে। কারন সেও তোমার সাথে থেকে আল্লাহর উপর
বিশ্বাস আরো মজবুত করতে পারে সহজেই।
আজ আমি অনেক খুশি তোমার মতন এমন একজনকে
পেয়ে।
লক্ষ কোটি শুক্রিয়া জানায় আল্লাহর দরবারে।
---আমিও খুশি, আপনাকে পেয়ে, যে এত সহজেই
আল্লাহর পথের পথিক হতে পেরেছেন।
---হুম, এখন ঘুমানো যাক, আবার ভোরে উঠে আগে
তাহাজ্জুত পরে তারপর ফজর নামাজ পড়ব।
---হুম, এখন ঘুমাই।
এভাবেই আমাদের দিন গুলো খুব সুখেই অতিবাহিত
হচ্ছে। বাবার সেদিনের সিন্ধান্ত আমার জন্য সবচেয়ে
ভাল ছিল। এরকম একজন বউমা পেয়ে বাবা মা তাদের
মেয়ের অভাবটা ভুলে গেছে। তাঁরা ছেলের বউ না যেন
একটা মেয়ে পেয়েছে।
লিজাকেও বাবা মাকে, শ্বশুর, শ্বাশুরি মনে না করে
নিজের বাবা মা মনে করে.
মা মেয়ের মাঝে যেমন মান অভিমান হয় মা ও লিজার
মাঝেও অভিমান ঝগড়া হয়।
তখন মা বলে কেও কি আমার নিজের মেয়ে নাকি যে
আমার সাথে কথা বলবে। অন্য দিকে
লিজা বলবে নিজের মা হলে রাগ করে থাকতে
পারত?????
লিজা রাগ করলে মা খাইয়ে না দেয়া পর্যন্ত খাবে
না।
মা রাগ করলে বলবে, নিজের মেয়ে হলে বলত মা চলো
আগে খেয়ে নিই, তারপর আবার ঝগড়া করবনে।
এসব দেখে আমি আর বাবা শুধু হাসি, আমাদের কিছু
বলা নিষেধ। এসব তাদের মা-মেয়ের ব্যাপার। আমরা
বাপ-বেটা যেন নাক না গলায়।
আমি বা বাবা যদি কিছু বলি সাথে সাথে লিজা আর
মায়ের মাঝে যতই ঝগরা করুক না কেন, সাথে সাথে এক
হয়ে যাবে। আর আমাদের উপর চড়াও হবে.......
.
.
বি: দ্র: ( নারীর প্রেমে মিলনের গান বাজে, পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা )
সমাপ্ত
পরবর্তী গল্পের জন্য আমাদের সাথে থাকুন
No comments